বুরো বাংলাদেশ এনজিও লোন পদ্ধতি ব্যবহার করে দেশের বিভিন্ন স্তরের মানুষের মাঝে ঋণ বিতরণ করে আসছে দীর্ঘদিন যাবত। বুরো বাংলাদেশ থেকে ঋণ নিতে চাইলে বিস্তারিত জানতে পারবেন এই পোস্টে।
বুরো বাংলাদেশ একটি সুপরিচিত এবং দীর্ঘস্থায়ী অলাভজনক বেসরকারি উন্নয়নমূলক সংস্থা। ১৯৯০ সাল থেকে এই প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশের মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। দীর্ঘ তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে বুরো বাংলাদেশ প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
এই সংস্থাটি সাধারণ মানুষের আর্থিক চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে বিভিন্ন প্রকার ঋণ প্রদান করে থাকে। বুরো বাংলাদেশ বিভিন্ন ধরনের ঋণ যেমন সাধারণ ঋণ, কৃষি ঋণ, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগ ঋণ (SME), পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন ঋণ এবং দুর্যোগ ঋণ সহ আরও অনেক প্রকার ঋণ দিয়ে থাকে।জনপ্রিয় পোস্টসমূহ
বুরো বাংলাদেশ এনজিও লোন পদ্ধতি, লোন নিতে কী কী কাগজপত্র লাগবে, লোন পাওয়ার জন্য যোগ্যতা এবং লোন আবেদন করার পদ্ধতি নিয়ে এই পোস্টে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। লোন নিতে আগ্রহী হলে শেষ অব্দি পড়ুন।
বুরো বাংলাদেশ এনজিও লোন পদ্ধতি
বুরো বাংলাদেশ দেশের বিভিন্ন স্তরের মানুষের জন্য ভিন্ন ধরনের লোন দিয়ে থাকে। লোনের ধরনের উপর ভিত্তি করে লোনের পরিমাণ এবং মেয়াদ কমবেশি হয়ে থাকে। এছাড়া, লোনের ভিন্নতার কারণে এসব লোনের উপর আরোপ করা সুদের হারও কমবেশি হয়ে থাকে।
বুরো বাংলাদেশ এনজিও লোন পদ্ধতি থেকে যেসব লোন পদ্ধতি অফার করা হচ্ছে, সেগুলো একটি তালিকা আকারে নিচে উল্লেখ করে দেয়া হয়েছে —জনপ্রিয় পোস্টসমূহ
- সাধারণ ঋণ
- জরুরি ঋণ
- পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন ঋণ
- কৃষি ঋণ
- মৌসুমি ঋণ
- SMAP ঋণ
- ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগ ঋণ (SME)
- দুর্যোগ ঋণ
- ইলেকট্রনিক প্রোডাক্ট ঋণ
উপরোক্ত তালিকায় উল্লিখিত লোন পদ্ধতিগুলোর লোনের পরিমাণ, পরিশোধের মেয়াদ এবং সুদের হার ভিন্ন হয়ে থাকে। এছাড়া, এসব লোন কাদেরকে দেয়া হবে এবং লোনের আবেদন করতে কী কী যোগ্যতা লাগবে তাতেও ভিন্নতা রয়েছে। এসব নিয়ে নিম্নে আরও বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
সাধারণ ঋণ
এই ঋণ মূলত সেই সকল ব্যক্তিদের জন্য যারা ছোটখাটো ব্যবসা শুরু করতে চান অথবা তাদের বর্তমান ব্যবসা বাড়াতে চান। এর প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো এটি আত্ম-কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে সহায়ক এবং ব্যবসার মূলধন যোগাতে সাহায্য করে। এই ঋণ সাধারণত কেন্দ্রভুক্ত সেবা পদ্ধতির মাধ্যমে প্রদান করা হয় এবং গ্রাহকের সুবিধা অনুযায়ী সাপ্তাহিক বা মাসিক কিস্তিতে এই ঋণ পরিশোধ করা যায়।
ঋণের মেয়াদ সাধারণত ১ বছর হয় এবং সর্বোচ্চ ২,০০,০০০ টাকা পর্যন্ত ঋণ নেয়া যায়। এই ঋণের ক্ষেত্রে সার্ভিস চার্জ (ক্রমহ্রাসমান) ২৪% ধার্য করা হয়। ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানগুলোর পরিচালন ব্যয় তুলনামূলকভাবে বেশি হওয়ার কারণে এই সার্ভিস চার্জ প্রচলিত ব্যাংক ঋণের তুলনায় কিছুটা বেশি মনে হতে পারে। তবে, এই চার্জ বুরো বাংলাদেশের কার্যক্রম পরিচালনা এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কাছে সেবা পৌঁছে দেওয়ার জন্য অপরিহার্য।জনপ্রিয় পোস্টসমূহ
জরুরি ঋণ
কোনো বিশেষ জরুরি পরিস্থিতিতে, যেমন উৎসবের সময় (ঈদ, পূজা, বড়দিন), চিকিৎসার প্রয়োজনে, সন্তানের শিক্ষা ব্যয়ের জন্য অথবা ব্যবসার জন্য স্বল্প পরিমাণে অর্থের প্রয়োজন হলে এই ঋণ দেওয়া হয়। এটিও কেন্দ্রভুক্ত সেবা পদ্ধতির অংশ এবং গ্রাহকের সুবিধা অনুযায়ী সাপ্তাহিক বা মাসিক কিস্তিতে এই ঋণ পরিশোধ করা যায়।
এই ঋণের মেয়াদ স্বল্প হয়, সাধারণত ৩ মাস, এবং ঋণের সর্বোচ্চ পরিমাণ ১০,০০০ টাকা পর্যন্ত সীমাবদ্ধ থাকে। এর সার্ভিস চার্জও সাধারণ ঋণের মতোই ২৪% (ক্রমহ্রাসমান)। স্বল্প মেয়াদে জরুরি প্রয়োজন মেটানোর জন্য এই ঋণ পদ্ধতিটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ।
পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন ঋণ
এই বিশেষ ঋণটি বিশুদ্ধ পানীয় জলের ব্যবহার এবং স্বাস্থ্যসম্মত ল্যাট্রিন ব্যবহারের সুবিধা তৈরি করার জন্য প্রদান করা হয়। এই ঋণের সেবা পদ্ধতি কেন্দ্রভুক্ত এবং কেন্দ্রবহির্ভূত উভয় প্রকার হতে পারে। গ্রাহকের সুবিধা অনুযায়ী সাপ্তাহিক বা মাসিক কিস্তিতে এই ঋণ পরিশোধ করা যায়।জনপ্রিয় পোস্টসমূহ
ঋণের মেয়াদ সাধারণত ১ বছর এবং এর পরিমাণ ৫,০০০ থেকে ৫০,০০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে, যা ক্ষেত্রবিশেষে বৃদ্ধিও করা যেতে পারে। এই ঋণের সার্ভিস চার্জ ২৪% (ক্রমহ্রাসমান)।
কৃষি ঋণ
কৃষি কাজের সাথে জড়িত ব্যক্তিদের নগদ অর্থের যোগান দেওয়া, কৃষিক্ষেত্রে আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা এবং কৃষকদের মধ্যে একটি সংগঠিত শক্তি গড়ে তোলার লক্ষ্যে এই ঋণ দেওয়া হয়। এই ঋণের সেবা পদ্ধতি কেন্দ্রভুক্ত ও কেন্দ্রবহির্ভূত উভয় প্রকার হতে পারে এবং গ্রাহকের সুবিধা অনুযায়ী সাপ্তাহিক বা মাসিক কিস্তিতে এই ঋণ পরিশোধ করা যায়।
ঋণের মেয়াদ ১, ২ অথবা ৩ বছর হতে পারে এবং ঋণের পরিমাণ গ্রাহকের আর্থিক সামর্থ্যের উপর নির্ভর করে। এই ঋণের সার্ভিস চার্জ ২৪% (ক্রমহ্রাসমান)। তবে, এবি ব্যাংক লিমিটেডের সাথে বুরো বাংলাদেশের একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে, যার আওতায় কৃষি ও পল্লী ঋণ বিতরণে ৯% হারে সুদ ধার্য করা হয়।
মৌসুমি ঋণ
এই ঋণ মাঠ পর্যায়ে প্রান্তিক ও মাঝারি কৃষকদের ঋণের চাহিদা পূরণের জন্য বিশেষভাবে চালু করা হয়েছে। মৌসুমি ফসল চাষাবাদ করার জন্য যে অর্থের প্রয়োজন হয়, তার যোগান দেয়াই এই ঋণের মূল উদ্দেশ্য। এর সেবা পদ্ধতি কেন্দ্রভুক্ত ও কেন্দ্রবহির্ভূত উভয় প্রকার এবং কিস্তি পরিশোধের ধরণ সাপ্তাহিক, মাসিক অথবা এককালীন হতে পারে।
ঋণের মেয়াদ ৩, ৪, ৫ অথবা ৬ মাস এবং ঋণের পরিমাণ ১,০০০ থেকে ৫০,০০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে। এই ঋণের সার্ভিস চার্জ ২৪% (ক্রমহ্রাসমান)। কৃষকদের ফসলের মৌসুমের উপর ভিত্তি করে এই ঋণের কিস্তি পরিশোধের নিয়ম নির্ধারণ করা হয়।
SMAP ঋণ
ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের কৃষি ঋণ এবং কৃষি বিষয়ক প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি, বহুমুখীকরণ এবং দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই এই ঋণের প্রধান উদ্দেশ্য। এই ঋণের সেবা পদ্ধতি কেন্দ্রভুক্ত ও কেন্দ্রবহির্ভূত। মাসিক কিস্তিতে ঋণের অর্থ পরিশোধ করতে হয়। আরও পড়ুন>>> ব্র্যাক ব্যাংক পার্সোনাল লোন ২০২৫ (বিস্তারিত তথ্য)
ঋণের মেয়াদ ১ অথবা ২ বছর এবং ঋণের পরিমাণ ৫,০০০ থেকে ২,০০,০০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে। এই ঋণের সার্ভিস চার্জ তুলনামূলকভাবে কম, যা ১৯% (ক্রমহ্রাসমান)।
ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগ ঋণ (SME)
যারা নিজস্ব উদ্যোগে স্বাবলম্বী হতে চান এবং বিদেশে অবস্থানরত প্রবাসী পরিবারের সদস্যরা যারা দেশে থাকেন, তারাও এই ঋণ নিতে পারেন। এই ঋণের সেবা পদ্ধতি কেন্দ্রভুক্ত ও কেন্দ্রবহির্ভূত। গ্রাহকের সুবিধা অনুযায়ী সাপ্তাহিক বা মাসিক কিস্তিতে এই ঋণ পরিশোধ করা যায়।। ঋণের মেয়াদ ১, ২ অথবা ৩ বছর হতে পারে এবং ঋণের পরিমাণ গ্রাহকের সামর্থ্যের উপর নির্ভর করে।
এই ঋণের সার্ভিস চার্জ ২৪% (ক্রমহ্রাসমান)। যদি কোনো ঋণগ্রহীতা মেয়াদ পূর্তির আগে এই ঋণের কিস্তি বা সম্পূর্ণ আসল পরিশোধ করতে চান, তবে শুধুমাত্র সেই সময়ের স্থিতির উপর ২% হারে অগ্রিম পরিশোধ চার্জ নেওয়া হবে।
দুর্যোগ ঋণ
সরকার কর্তৃক ঘোষিত দুর্যোগ পরবর্তী সময়ে ব্যবসার ক্ষতি বা পুঁজি ঘাটতি কাটিয়ে ওঠার জন্য বুরো বাংলাদেশ এই ঋণ সহায়তা প্রদান করে থাকে। এই ঋণের সেবা পদ্ধতি কেন্দ্রভুক্ত। গ্রাহকের সুবিধা অনুযায়ী সাপ্তাহিক বা মাসিক কিস্তিতে এই ঋণ পরিশোধ করা যায়।
ঋণের মেয়াদ ১ বছর এবং ঋণের সর্বোচ্চ পরিমাণ ২০,০০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে। এই ঋণের সার্ভিস চার্জ ১৮% (ক্রমহ্রাসমান)। দুর্যোগকালীন সময়ে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সহায়তায় এই ঋণ একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে বিগত অনেক বছর ধরে।
ইলেকট্রনিক প্রোডাক্ট ঋণ
সমাজের সকল স্তরের মানুষের জন্য স্মার্টফোন ও অন্যান্য গৃহস্থালীর সামগ্রী সহজলভ্য করে তোলা এই ঋণের লক্ষ্য। এই ঋণের সেবা পদ্ধতি কেন্দ্রভুক্ত ও কেন্দ্রবহির্ভূত। গ্রাহকের সুবিধা অনুযায়ী সাপ্তাহিক বা মাসিক কিস্তিতে এই ঋণ পরিশোধ করা যায়।
ঋণের মেয়াদ ৩, ৬, ৯ অথবা ১২ মাস। ঋণের পরিমাণ ৮,০০০ থেকে ১,৫০,০০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে তাও ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ডের প্রয়োজন ছাড়াই। এই ঋণের সার্ভিস চার্জ ২৪% (ক্রমহ্রাসমান)।
এছাড়াও পড়ুন — সিটি ব্যাংক স্টুডেন্ট লোন ২০২৫ (আপডেট)
বুরো বাংলাদেশ এনজিও লোন পদ্ধতির বিভিন্ন ঋণের প্রকারভেদ ও বৈশিষ্ট্য
বুরো বাংলাদেশ এনজিও লোন পদ্ধতির বিভিন্ন ঋণ সুবিধা এবং সেগুলোর বৈশিষ্ট্য একটি টেবিলে উল্লেখ করে দেয়া হয়েছে। এই টেবিলটি ভালো করে লক্ষ্য করলে লোন পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন।
ঋণের প্রকার | সংক্ষিপ্ত বৈশিষ্ট্য | ঋণের মেয়াদ | ঋণের পরিমাণ | সার্ভিস চার্জ/সুদের হার | কিস্তির ধরণ | সেবা পদ্ধতি |
সাধারণ ঋণ | ব্যবসায়িক বা আয় বৃদ্ধিমূলক কাজের জন্য, আত্ম-কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে সাহায্য করে। | ১ বছর | সর্বোচ্চ ২,০০,০০০ টাকা | ২৪% (ক্রমহ্রাসমান) | সাপ্তাহিক / মাসিক | কেন্দ্রভুক্ত |
জরুরি ঋণ | জরুরি প্রয়োজন যেমন উৎসব, চিকিৎসা, শিক্ষা অথবা ব্যবসার জন্য স্বল্প পরিমাণে ঋণ। | ৩ মাস | সর্বোচ্চ ১০,০০০ টাকা | ২৪% (ক্রমহ্রাসমান) | সাপ্তাহিক / মাসিক | কেন্দ্রভুক্ত |
পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন ঋণ | বিশুদ্ধ পানীয় জল ও স্বাস্থ্যসম্মত ল্যাট্রিনের জন্য। | ১ বছর | ৫,০০০ – ৫০,০০০ টাকা (অঞ্চলভেদে বৃদ্ধি হতে পারে) | ২৪% (ক্রমহ্রাসমান) | সাপ্তাহিক / মাসিক | কেন্দ্রভুক্ত ও কেন্দ্রবহির্ভূত |
কৃষি ঋণ | কৃষকদের নগদ সহায়তা, আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি ব্যবহারের জন্য। | ১, ২ ও ৩ বছর | সদস্যের আর্থিক সামর্থ্য অনুযায়ী | ২৪% (ক্রমহ্রাসমান), এবি ব্যাংকের সাথে ৯% সুদ | সাপ্তাহিক / মাসিক | কেন্দ্রভুক্ত ও কেন্দ্রবহির্ভূত |
মৌসুমি ঋণ | প্রান্তিক ও মাঝারি কৃষকদের ঋণের চাহিদা পূরণ। | ৩, ৪, ৫ ও ৬ মাস | ১,০০০ – ৫০,০০০ টাকা | ২৪% (ক্রমহ্রাসমান) | সাপ্তাহিক / মাসিক / এককালীন | কেন্দ্রভুক্ত ও কেন্দ্রবহির্ভূত |
SMAP ঋণ | ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের কৃষি ঋণ ও প্রশিক্ষণ। | ১ ও ২ বছর | ৫,০০০ – ২,০০,০০০ টাকা | ১৯% (ক্রমহ্রাসমান) | মাসিক | কেন্দ্রভুক্ত ও কেন্দ্রবহির্ভূত |
ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগ ঋণ | স্বনির্ভর হতে চান এমন ব্যক্তি ও প্রবাসী পরিবারের সদস্যদের জন্য। | ১, ২ ও ৩ বছর | সদস্যদের সামর্থ্য অনুযায়ী | ২৪% (ক্রমহ্রাসমান) | সাপ্তাহিক / মাসিক | কেন্দ্রভুক্ত ও কেন্দ্রবহির্ভূত |
দুর্যোগ ঋণ | দুর্যোগ পরবর্তী ব্যবসার ক্ষতি বা পুঁজি ঘাটতি পূরণে সহায়তা। | ১ বছর | সর্বোচ্চ ২০,০০০ টাকা | ১৮% (ক্রমহ্রাসমান) | সাপ্তাহিক / মাসিক | কেন্দ্রভুক্ত |
ইলেকট্রনিক প্রোডাক্ট ঋণ | স্মার্টফোন ও গৃহস্থালীর সামগ্রী ক্রয়ে সহায়তা, ডিজিটালাইজেশন বৃদ্ধি। | ৩, ৬, ৯ ও ১২ মাস | ৮,০০০ – ১,৫০,০০০ টাকা | ২৪% (ক্রমহ্রাসমান) | সাপ্তাহিক / মাসিক | কেন্দ্রভুক্ত ও কেন্দ্রবহির্ভূত |
বুরো বাংলাদেশ এনজিও লোন পাওয়ার যোগ্যতা
বুরো বাংলাদেশ এনজিও লোন পদ্ধতি থেকে লোন পাওয়ার জন্য এবং লোন আবেদন করার জন্য কিছু যোগ্যতা থাকতে হবে। এসব বিষয় নিম্নে বর্ণনা করা হয়েছে।
১৮ থেকে ৬০ বছর বয়সের যেকোনো বাংলাদেশী নাগরিক বুরো বাংলাদেশের গ্রাহক/সদস্য হতে পারবেন। ঋণ পাওয়ার প্রথম ধাপ হলো বুরো বাংলাদেশের সদস্যপদ গ্রহণ করা। এর জন্য আগ্রহী ব্যক্তিকে তার প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ সংস্থার নিকটস্থ কেন্দ্র/সমিতির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মী অথবা নিকটস্থ শাখায় যোগাযোগ করতে হবে।
শাখা কর্তৃপক্ষ তখন যাচাই বাছাই, জরিপ এবং অন্যান্য আনুষাঙ্গিক কাজ সম্পন্ন করে আগ্রহী গ্রাহককে সদস্য হিসেবে ভর্তির ব্যবস্থা করবেন। সদস্যপদ পাওয়ার জন্য আবেদনকারীকে একটি সাধারণ সঞ্চয় হিসাব খুলতে হয়। কেন্দ্রভুক্ত ঋণ এবং কেন্দ্র বহির্ভূত ঋণের ক্ষেত্রে কিছু অতিরিক্ত শর্তাবলী প্রযোজ্য।
কেন্দ্রভুক্ত সদস্যদের জন্য —
কেন্দ্রভুক্ত সদস্যদের জন্য ঋণের আবেদন করতে বেশ কিছু শর্ত পূরণ করতে হয়। এগুলো হচ্ছে —
- কেন্দ্রে যোগদানের বয়স কমপক্ষে ০২ সপ্তাহ হতে হবে।
- নিয়মিত সঞ্চয় জমার অভ্যাস থাকতে হবে।
- আর্থিক নিরাপত্তা তহবিলে নির্ধারিত হারে চাঁদা দিতে হবে।
- নিয়মিত কেন্দ্র সভায় উপস্থিত থাকতে হবে।
কেন্দ্র বহির্ভূত সদস্যদের জন্য —
কেন্দ্র বহির্ভূত সদস্যদের জন্য ঋণের আবেদন করতে বেশ কিছু শর্ত পূরণ করতে হয়। এগুলো হচ্ছে —
- সংস্থার নির্ধারিত নিয়মানুযায়ী সদস্য/গ্রাহক হতে হবে।
- দৃশ্যমান কাজ/ব্যবসায়ের জন্য ঋণ নিতে হবে।
- আর্থিক নিরাপত্তা তহবিলে নির্ধারিত হারে চাঁদা প্রদান করতে হবে।
- এছাড়াও, ঋণগ্রহীতাকে অবশ্যই কর্মক্ষম হতে হবে।
- সংস্থার নিয়মের প্রতি আস্থা রাখতে হবে।
কৃষি ঋণ এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগ ঋণের ক্ষেত্রে ঋণগ্রহীতার আর্থিক সামর্থ্য বিশেষভাবে বিবেচনা করা হয়।
বুরো বাংলাদেশ এনজিও লোন পদ্ধতির প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
ঋণের জন্য আবেদন করার পূর্বে বুরো বাংলাদেশের সদস্য হওয়া আবশ্যক। সদস্য হওয়ার জন্য আবেদনকারীকে নিম্নলিখিত কাগজপত্র জমা দিতে হবে:
- সদস্য/গ্রাহকের জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি।
- সদস্য/গ্রাহকের ০২ কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি।
- ভর্তি ফি, পাশবই ফি এবং অন্যান্য ফি বাবদ মোট ২৫ টাকা।
সদস্যপদ পাওয়ার পর, নির্দিষ্ট ঋণের জন্য আবেদনের সময় অতিরিক্ত কিছু কাগজপত্র লাগতে পারে। যা ঋণের ধরনের উপর নির্ভর করে। তবে, প্রাথমিক পর্যায়ে এই তিনটি জিনিস অবশ্যই প্রয়োজন।
বুরো বাংলাদেশ এনজিও লোন আবেদনের পদ্ধতি
বুরো বাংলাদেশ এনজিও লোন পদ্ধতিতে সদস্য হওয়ার জন্য আগ্রহী ব্যক্তিকে তার প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ সংস্থার নিকটস্থ কেন্দ্র/সমিতির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মীকে প্রদান করতে হবে। অথবা কাগজপত্র নিয়ে নিকটস্থ শাখায় যোগাযোগ করতে হবে। সেখানে তাকে একটি নির্ধারিত ভর্তি ফরম পূরণ করতে হবে এবং প্রয়োজনীয় ফি জমা দিতে হবে।
এরপর শাখা কর্তৃপক্ষ আবেদনকারীর কাগজপত্র যাচাই বাছাই করবেন। একটি জরিপ পরিচালনা করবেন এবং অন্যান্য আনুষাঙ্গিক কাজ সম্পন্ন করে তাকে সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। সদস্যপদ পাওয়ার পরই একজন ব্যক্তি বুরো বাংলাদেশের বিভিন্ন ঋণ সেবার জন্য আবেদন করতে পারবেন।
এই পদ্ধতি অনুসরণ করে ঋণের জন্য আবেদন করার পর তারা ঋণ অনুমোদন দিবে। ঋণের অর্থ সরাসরি আপনার হাতে প্রদান করা হবে। এরপর, ঋণের ধরণ অনুযায়ী সাপ্তাহিক/মাসিক/এককালীন হিসেবে কিস্তি আকারে ঋণের অর্থ পরিশোধ করতে পারবেন।
শেষ কথা
এই পোস্টে বুরো বাংলাদেশ এনজিও লোন পদ্ধতি, যোগ্যতা, আবেদন প্রক্রিয়া এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। লোন নিতে আগ্রহী ব্যক্তিরা বুরো বাংলাদেশ এনজিও লোন পদ্ধতির আরও বিস্তারিত তথ্যের জন্য এবং ঋণের জন্য আবেদন করতে বুরো বাংলাদেশের নিকটস্থ শাখায় যোগাযোগ করুন। যেকোনো প্রশ্ন থাকলে নিম্নোক্ত প্রশ্নোত্তর সেকশন দেখুন। বুরো বাংলাদেশ এনজিও লোন পদ্ধতি পোষ্টটি বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করুন।
বিভিন্ন প্রশ্নোত্তর (FAQ)
বুরো বাংলাদেশ কী ধরনের ঋণ প্রদান করে?
বুরো বাংলাদেশ সাধারণ ঋণ, জরুরি ঋণ, পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন ঋণ, কৃষি ঋণ, মৌসুমি ঋণ, SMAP ঋণ, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগ ঋণ (SME), দুর্যোগ ঋণ এবং ইলেকট্রনিক প্রোডাক্ট ঋণ সহ বিভিন্ন প্রকার ঋণ প্রদান করে থাকে।
ঋণ পাওয়ার জন্য প্রাথমিক যোগ্যতা কী?
ঋণ পাওয়ার জন্য প্রাথমিক যোগ্যতা হলো আবেদনকারীকে ১৮ থেকে ৬০ বছর বয়সী বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে এবং বুরো বাংলাদেশের সদস্য হতে হবে।
বিভিন্ন ঋণের সুদের হার/সার্ভিস চার্জ কত?
বিভিন্ন ঋণের সুদের হার এবং সার্ভিস চার্জ ঋণের প্রকারভেদে ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে। বিস্তারিত তথ্য টেবিল ২ এ দেওয়া আছে।
ঋণের কিস্তি পরিশোধের নিয়মাবলী কী?
অধিকাংশ ঋণের কিস্তি সাপ্তাহিক বা মাসিক ভিত্তিতে পরিশোধ করা যায়। মৌসুমী ঋণের ক্ষেত্রে এককালীন পরিশোধের সুযোগ থাকে। উপায়, বিকাশ ও নগদের মাধ্যমেও কিস্তি পরিশোধ করা যায়।
ঋণের জন্য কীভাবে আবেদন করতে হয়?
ঋণের জন্য আবেদন করতে প্রথমে বুরো বাংলাদেশের সদস্য হতে হয়। এর জন্য নিকটস্থ শাখায় প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ যোগাযোগ করতে হবে।
আবেদন করার সময় কী কী কাগজপত্র প্রয়োজন?
সদস্য হওয়ার জন্য জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি, পাসপোর্ট সাইজের ছবি এবং ভর্তি ফিসহ অন্যান্য ফি বাবদ ২৫ টাকা প্রয়োজন। ঋণের জন্য অতিরিক্ত কাগজপত্র লাগতে পারে।
কেন্দ্রভুক্ত এবং কেন্দ্র বহির্ভূত ঋণের মধ্যে পার্থক্য কী?
কেন্দ্রভুক্ত ঋণ মূলত দলভিত্তিক কার্যক্রমের মাধ্যমে প্রদান করা হয়, যেখানে সদস্যরা নিয়মিত সভায় অংশগ্রহণ করে এবং যৌথভাবে ঋণের গ্রহণ করে। কেন্দ্র বহির্ভূত ঋণ ব্যক্তিগত পর্যায়ে আলাদাভাবে প্রদান করা হয়।
বুরো বাংলাদেশ কি জামানত ছাড়া ঋণ দেয়?
হ্যাঁ, বুরো বাংলাদেশ সাধারণত জামানত বা প্রসেসিং ফি ছাড়াই ঋণ প্রদান করে।