সিটি ব্যাংক অনলাইন লোন ২০২৫ (বিস্তারিত তথ্য)

সিটি ব্যাংক অনলাইন লোন

সিটি ব্যাংক অনলাইন লোন নিতে চাচ্ছেন? কিভাবে অনলাইনে সিটি ব্যাংকে লোনের জন্য আবেদন করতে হয় এবং লোন নিতে কী কী প্রয়োজন হয় এসব বিষয় জানতে পারবেন এই পোস্টে।

সিটি ব্যাংক থেকে লোন নিতে চাইলে তাদের ব্রাঞ্চে যোগাযোগ করে লোনের জন্য আবেদন করতে হয়। তবে, আপনি চাইলে সিটি ব্যাংক অনলাইন লোন নিতে পারবেন। যদিও সিটি ব্যাংক লোন দিচ্ছে, তবে মাঝে আরেকটি মাধ্যম কাজ করবে এই লোন নেয়ার জন্য।

কীভাবে সিটি ব্যাংক থেকে অনলাইনে লোন নিতে হয় এবং লোন নেয়ার জন্য করণীয় কী এসব বিষয় বিস্তারিত আলোচনা করেছি এই পোস্টে। তো চলুন, বিস্তারিত জেনে নেয়া যাক।

সিটি ব্যাংক অনলাইন লোন

সিটি ব্যাংক থেকে সরাসরি লোন নেয়ার জন্য আবেদন করতে হয়। এজন্য, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিতে হয়। লোন নেয়ার জন্য যোগ্যতা থাকতে হয়। তবেই, তারা যাচাই-বাছাই করে লোনের আবেদন অনুমোদন করে থাকে। কিন্তু, আমরা চাইলে অন্য একটি মাধ্যম ব্যবহার করে সিটি ব্যাংক থেকে অনলাইনের মাধ্যমে লোন নিতে পারবো।

বিকাশ অ্যাপ ব্যবহার করে সিটি ব্যাংক থেকে অনলাইনে লোন নেয়া যায়। অর্থাৎ, সিটি ব্যাংক বিকাশের মাধ্যমে বিকাশ গ্রাহকদের মাঝে লোন প্রদান করে থাকে। বিকাশের মাধ্যমে লোন নেয়া এবং লোনের টাকা উত্তোলন করা যাবে। এছাড়া, লোনের অর্থ কিস্তি আকারে বিকাশের মাধ্যমেই পরিশোধ করা যাবে।

বিকাশ অ্যাপ দিয়ে কিভাবে সিটি ব্যাংক থেকে অনলাইনে লোন নিতে হয় এবং লোন নেয়ার জন্য কী কী শর্ত রয়েছে এসব বিষয় নিম্নে আরও বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। চলুন, জেনে নেয়া যাক।

সিটি ব্যাংক অনলাইন লোন অ্যাপ্লাই

সিটি ব্যাংক অনলাইন লোন আবেদন করার কোনো সুযোগ নেই। যদি সিটি ব্যাংক থেকে লোন নিতে চান, তাহলে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সহ সিটি ব্যাংকের নিকটস্থ যেকোনো ব্রাঞ্চে যোগাযোগ করতে হবে। এরপর, আপনি কোন ধরনের লোন নিতে ইচ্ছুক তা জেনে তারা লোনের জন্য আবেদন করতে সহযোগিতা করবে।

অতঃপর, কাগজপত্র এবং আবেদন ফরম জমা দেয়ার মাধ্যমে যাচাই-বাছাই করে তারা আপনাকে লোন প্রদান করবে। তবে, সিটি ব্যাংকে সরাসরি লোন আবেদন করার বিষয়টি কিছুটা সময়সাপেক্ষ। আপনি যদি ঘরে বসে অনলাইনের মাধ্যমে লোন আবেদন করতে চান এবং দ্রুত সময়ে লোন পেতে চান, তাহলে বিকাশ অ্যাপ ব্যবহার করতে হবে।

কারণ, বিকাশ অ্যাপের মাধ্যমে সিটি ব্যাংক লোন প্রদান করছে। বিকাশ লোন দিলেও লোনের অর্থ দিচ্ছে সিটি ব্যাংক। বিকাশ থেকে কিভাবে লোনের আবেদন করতে হয় তা নিচে বিস্তারিত বর্ণনা করা হয়েছে।

আরও পড়ুন >>>বুরো বাংলাদেশ এনজিও লোন পদ্ধতি ২০২৫ (আপডেট)

বিকাশ লোন কিভাবে পাওয়া যায়

বিকাশ লোনের সুবিধা মূলত সিটি ব্যাংক কর্তৃক নির্ধারিত কিছু নীতিমালার উপর নির্ভরশীল। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী, এই ঋণ পাওয়ার জন্য কিছু যোগ্যতা ও শর্তাবলী পূরণ করতে হয়। সাধারণত, বিকাশের গ্রাহক যারা বিকাশ অ্যাপ ব্যবহার করে লেনদেন করেন এবং তাদের অ্যাকাউন্টে অধিক পরিমাণে টাকা রাখেন তারা এই লোন সুবিধা পেয়ে থাকেন।

বিকাশ অ্যাপ ব্যবহার এবং নিয়মিত লেনদেন করার অভ্যাস থাকলে ঋণ পাওয়ার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাওয়া যায়। এছাড়া, বিকাশ অ্যাকাউন্টে টাকা জমা রাখা, অ্যাড মানি এবং পেমেন্ট অপশন অধিক ব্যবহার করলে বিকাশ থেকে লোন সুবিধা প্রদান করা হয়।

এই ঋণের ক্ষেত্রে সাধারণত কোনো ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বা জামানতের প্রয়োজন হয় না। বর্তমানে বিকাশের মাধ্যমে ৫০০ টাকা থেকে শুরু করে ৩০,০০০ টাকা পর্যন্ত ঋণ পাওয়া যায়।

এছাড়া, বিকাশ “পে-লেটার” নামে আরেকটি বিশেষ ঋণ সুবিধা চালু করেছে, যার মাধ্যমে গ্রাহকরা ৫০০ টাকা থেকে ৩০,০০০ টাকা পর্যন্ত ঋণ নিতে পারবেন এবং বিকাশ অ্যাপ ব্যবহার করে বিভিন্ন মার্চেন্ট পয়েন্টে কেনাকাটা করে সরাসরি পেমেন্ট করতে পারবেন অ্যাকাউন্টে টাকা না থাকলেও।

বিকাশ অ্যাপের মাধ্যমেই গ্রাহকরা ঋণ নেয়ার যোগ্য কিনা এবং কত টাকা ঋণ পেতে পারেন তা জানতে পারবেন। এর জন্য বিকাশ অ্যাপের ‘লোন’ অপশনে ট্যাপ করতে হবে।

কিভাবে বিকাশ থেকে টাকা লোন নেওয়া যায়

বিকাশ থেকে লোন নেয়ার জন্য বিকাশ অ্যাপ ব্যবহার করতে হবে। ইউএসএসডি কোড ডায়াল করে বিকাশ থেকে লোন পাওয়া যাবেনা। আপনি লোন পাওয়ার যোগ্য কিনা এবং কত টাকা লোন পেতে পারেন সেটিও নিম্নোক্ত পদ্ধতি অনুসরণ করে জানতে পারবেন।

লোন নেয়ার যোগ্য হলে নিম্নোক্ত পদ্ধতি অনুসরণ করার মাধ্যমেই বিকাশ থেকে লোন নিতে পারবেন। লোনের অর্থ সরাসরি আপনার বিকাশ অ্যাকাউন্টে চলে আসবে।

  • প্রথমে আপনার স্মার্টফোনে বিকাশ অ্যাপটি ওপেন করুন।
  • অ্যাপের হোমপেজে ‘লোন’ আইকনটি খুঁজে বের করে সেটিতে ক্লিক করুন।
  • যদি আপনি ঋণের জন্য যোগ্য হন, তাহলে ঋণের পরিমাণ দেখতে পারবেন।
  • সেখানে দেখানো লিমিটের মাঝে আপনি কত টাকা ঋণ নিতে চান তা লিখুন।
  • এরপর আপনাকে ঋণের শর্তাবলীতে সম্মতি দিতে হবে।
  • সবশেষে, আপনার বিকাশ অ্যাকাউন্টের পিন নম্বরটি দিন এবং সাবমিট করুন।

যদি আপনার আবেদন সফল হয়, তাহলে ঋণের টাকা তাৎক্ষণিকভাবে আপনার বিকাশ অ্যাকাউন্টে জমা হয়ে যাবে। এই পুরো প্রক্রিয়ায় কোনো প্রকার কাগজপত্র বা জামানতের প্রয়োজন নেই। অনেক সহজেই লোন আবেদন করে টাকা নিতে পারবেন। লোন নেয়ার পর ৯% সুদের হারে লোনের অর্থ পরিশোধ করতে পারবেন।

বিকাশ পে লেটার ঋণ আবেদন

বিকাশ অ্যাপের লোন অপশন থেকে লোন নেয়ার ছাড়াও পে লেটার অপশন থেকেও লোন নেয়া যায়। সাধারণত যেকোনো জায়গায় পেমেন্ট করার সময় আপনি এই সুবিধা নিতে পারবেন। অর্থাৎ, পেমেন্ট করতে পারবেন আপনার অ্যাকাউন্টে টাকা না থাকলেও। কীভাবে আবেদন করতে হয় তা নিচে উল্লেখ করে দেয়া হয়েছে।

  • বিকাশ অ্যাপ ওপেন করে পেমেন্ট অপশনে গিয়ে মার্চেন্টের QR Code স্ক্যান করুন বা নাম্বার লিখুন।
  • পেমেন্টের জন্য টাকার পরিমাণ লিখুন।
  • পেমেন্ট অপশন হিসেবে ‘পে-লেটার’ সিলেক্ট করুন।
  • পরবর্তী ধাপে পরিশোধের পদ্ধতি নির্বাচন করতে বলা হবে। সাত দিনের মধ্যে সুদবিহীন অথবা তিন বা ছয় মাসে সুদসহ পরিশোধ করতে পারবেন।
  • ছয় মাসের কিস্তিতে পরিশোধের ক্ষেত্রে শুরুতে ২০ শতাংশ ডাউনপেমেন্ট লাগতে পারে।
  • আপনার বিকাশ পিন দিয়ে লেনদেনটি সম্পন্ন করুন।

পে লেটার অপশন ব্যবহার করে আপনার বিকাশ অ্যাকাউন্টে ব্যালেন্স না থাকলেও পেমেন্ট করতে পারবেন এবং পরবর্তীতে সাত দিনের মাঝে সুদ ছাড়াই অর্থ পরিশোধ করতে পারবেন। অথবা, চাইলে ৯% সুদের হারে তিন মাস বা ছয় মাসে পরিশোধ করতে পারবেন।

বিকাশ লোনের সুদের হার কত

বিকাশ লোনের ক্ষেত্রে সুদের হার বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক নির্ধারিত নীতিমালা অনুযায়ী ধার্য করা হয়। সাধারণত, এই ঋণের উপর বার্ষিক ৯ শতাংশ হারে সুদ প্রযোজ্য হবে। এই সুদ দৈনিক ভিত্তিতে হিসাব করা হয়।

তবে, বিকাশের ‘পে-লেটার’ সার্ভিসের ক্ষেত্রে একটি বিশেষ সুবিধা রয়েছে। যদি গ্রাহক লোন নেওয়ার সাত দিনের মধ্যে সম্পূর্ণ অর্থ পরিশোধ করে দেন, তাহলে তাকে কোনো সুদ দিতে হবে না। কিন্তু যদি সাত দিনের মধ্যে টাকা ফেরত দিতে ব্যর্থ হন, তাহলে সেই ‘পে-লেটার’ সেবাটি তিন মাসের ক্ষুদ্র ঋণে পরিণত হবে এবং বার্ষিক ৯ শতাংশ হারে সুদ প্রযোজ্য হবে।

‘পে-লেটার’ ঋণের ছয় মাসের পরিশোধ অপশনেও বার্ষিক ৯ শতাংশ হারে সুদ প্রযোজ্য হবে এবং এক্ষেত্রে গ্রাহককে শুরুতে ২০ শতাংশ ডাউনপেমেন্ট দিতে হবে। এছাড়াও, লোনের উপর একটি ব্যাংক প্রসেসিং ফি প্রযোজ্য হয়, যা লোনের পরিমাণের উপর ০.৫৭৫ শতাংশ (০.৫% + ভ্যাট)।

বিকাশ লোন পরিশোধের সময়সীমা

বিকাশ লোনের পরিশোধের সময়সীমা ঋণের প্রকারের উপর নির্ভর করে। সাধারণ বিকাশ লোন (ন্যানো লোন) সাধারণত ৩ মাস মেয়াদী হয়। এই ঋণের টাকা তিন মাসের মধ্যে মাসিক কিস্তিতে পরিশোধ করতে হয়।

অন্যদিকে, ‘পে-লেটার’ ঋণের ক্ষেত্রে পরিশোধের জন্য একাধিক পদ্ধতি রয়েছে। সাত দিনের মধ্যে পরিশোধ করলে কোনো সুদ লাগবে না। যদি সাত দিনের মধ্যে পরিশোধ করা না যায়, তাহলে এটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে ৩ মাসের কিস্তিতে পরিশোধের জন্য নির্ধারিত হবে এবং বার্ষিক ৯ শতাংশ হারে সুদ প্রযোজ্য হবে। যদি ৬ মাসে পরিশোধ করতে চান, তাহলে ২০% ডাউন পেমেন্ট দিতে হবে।

লোন পরিশোধের নির্ধারিত তারিখে বিকাশ অ্যাকাউন্ট থেকে অটোমেটিক কিস্তির টাকা কেটে নেওয়া হবে। লোন ড্যাশবোর্ডে গ্রাহক তার কিস্তির পরিমাণ ও পরিশোধের তারিখ দেখতে পারবেন। গ্রাহক চাইলে নির্ধারিত সময়ের আগেও লোনের টাকা পরিশোধ করতে পারবেন। সেক্ষেত্রে, তাকে শুধুমাত্র লোন নেয়ার দিন থেকে লোন পরিশোধের দিনের জন্যই সুদ বহন করতে হবে।

বিলম্ব ফি

যদি কোনো গ্রাহক লোনের কিস্তি নির্ধারিত তারিখে পরিশোধ করতে ব্যর্থ হন, তাহলে বিলম্ব ফি প্রযোজ্য হবে। সাধারণ বিকাশ লোনের ক্ষেত্রে, বিলম্ব ফি’র লোনের পরিমাণের উপর বার্ষিক ১.৫ শতাংশ।

এই বিলম্ব ফি এড়াতে গ্রাহকদের উচিত লোন নেয়ার পর তাদের বিকাশ অ্যাকাউন্টে নির্ধারিত তারিখের পূর্বে পর্যাপ্ত ব্যালেন্স রাখা এবং সময়মতো কিস্তি পরিশোধ করা।

উপরোক্ত এই দুইটি পদ্ধতি ব্যবহার করে সিটি ব্যাংক থেকে বিকাশের মাধ্যমে অনলাইনে লোন নিতে পারবেন। যদি সিটি ব্যাংক থেকে সরাসরি লোন নিতে চান, তাহলে সিটি ব্যাংকের যেকোনো শাখায় গিয়ে লোনের জন্য আবেদন করতে হবে।

শেষ কথা

সিটি ব্যাংক অনলাইন লোন এই পোষ্টের মাধ্যমে আমরা আপনাদের কাছে বিস্তারিত তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। সিটি ব্যাংক অনলাইন লোন পোষ্টটি বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করুন। আর ‍যদি আপনার কোন মতামত থাকে সিটি ব্যাংক অনলাইন লোন এই পোষ্ট সম্পর্কে তাহলে কমেন্ট করুন।

বিভিন্ন প্রশ্নোউত্তর (FAQ)

সিটি ব্যাংকের ওয়েবসাইট লিংক

https://www.citybankplc.com/

সিটি ব্যাংক সুইফট কোড

CIBLBDDH

সিটি ব্যাংক রাউটিং নম্বর

225275357

About Masum Siddique

আমি একজন ফিনান্স কনটেন্ট স্ট্র্যাটেজিস্ট এবং ডিজিটাল গবেষক, যার ৭ বছরের অভিজ্ঞতা রয়েছে বাংলাদেশের ব্যাংকিং এবং ঋণ ব্যবস্থাপনা বিষয়ক কনটেন্ট ডেভেলপমেন্টে। আমার লক্ষ্য হলো বাংলাদেশি জনগণকে সঠিক এবং আপডেটেড লোন বিষয়ক তথ্য দিয়ে সহায়তা করা যাতে তারা তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী সঠিক আর্থিক সিদ্ধান্ত নিতে পারে।

View all posts by Masum Siddique →

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *